মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি পেলে করণীয় কি? মলদ্বারে মাংস বৃদ্ধি হোমিও ঔষধ

আজকের পোস্টে আমরা মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি বা পাইলস নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি কি, মলদ্বারে মাংস বৃদ্ধি হোমিও ঔষধ, মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি কেন হয়, মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি পেলে কি কি সমস্যা হয়, কি কি ওষুধ খাওয়া যায়, এর চিকৎসা কি, কোন ডাক্তার দেখাবেন ইত্যাদি সকল বিষয় নিয়ে আজকের পোস্টে আলোচনা করা হবে বিশেষ করে মলদ্বারে মাংস বৃদ্ধি হোমিও ঔষধ খাওয়া উচিত কি না। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি বা পাইলস কি?

পাইলস রোগটির কথা আমরা অহরহ শুনি। বিশেষ করে বৃদ্ধ ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি ভোগে। পাইলস রোগের চিকিৎসার পূর্বে আমাদের অবশ্যই বুঝে মতে হবে পাইলস ঠিক কি। মলদ্বার বা পায়ুপথ আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহের একটি। মলদ্বার বা পায়ুপথের মাধ্যমে আমরা মল ত্যাগ করে থাকি।

এই মলদ্বারে নানা ধরণের রোগ বা সমস্যা দেখা দেয়। পাইলসও এগুলোর একটি। আসলে পাইলস হলো বৃহদান্ত্রের শেষাংশে রেকটামের ভেতরে ও বাইরে থাকা কুশনের মতো একটি রক্তশিরার জালিকা থাকে। এর যখন প্রদাহ হয় তখন তাকে হেমোরয়েডস বা বাংলায় অর্শ্বরোগ বলা হয়। এটি মল নিয়ন্ত্রের কাজে সহায়তা করে। মলদ্বারে মাংস বৃদ্ধি হোমিও ঔষধ খাবেন কি না নিচে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি কেন হয়?

মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি বা পাইলস ঠিক কোনো কারণ বলা যায় না। কিন্তু ডাক্তারদের মতে বেশ কিছু কারণে মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি অএতে পারে। মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধির কারণ প্রতি রোগীর ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। মলদ্বারের মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে যা হচ্ছে পায়ুপথের ওসব শিরার প্রদাহ বা ফুলে যাওয়ার কারণে পাইলস হয়।

এখম ওসব শিরার প্রদাহ কেন হয় তা জানতে হবে। ডাক্তারদের মতে পাইলসের মূল কারণগুলো হচ্ছে নানা ধরণের অন্ত্রের সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, ব্যায়াম ও আঁশযুক্ত বা রাফেজ জাতীয় খাদ্যের অভাব, পেটের উপর দীর্ঘায়িত চাপ।

এছাড়া দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ও দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকার ফলেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ ভারি মালপত্র বহন করা, স্থুলতা, যকৃত রোগ বা লিভার সিরোসিস, কায়িক পরিশ্রেমের অভাব ইত্যাদিও কারণ হতে পারে। অনেকক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে কিংবা পায়ুপথে যৌ-ন-ক্রিয়ার ফলেও পাইলস দেখা দিতে পারে৷

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ভ্রুণের চাপের ও নানা ধরণের গর্ভকালীন হরমোনের পরিবর্তনের ফলে হেমোরয়েড রক্তনালি বর্ধিত হত যা ভবিষ্যতে পাইলসের সুযোগ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার পাইলস হওয়ার কোনো কারণও লাগে না। অনেক সময় পারিবারিক যদি পাইলসের ইতিহাস থাকে তাহলে কোনো কারণ ছাড়াই আপনার পাইলস হতে পারে।

পাইলসের প্রকারভেদ ও পর্যায় সমূহ:

পাইলসের বেশ কিছু ধরণ রয়েছে। পাইলস বা অর্শ্বরোগ ৩ ধরণের হয়ে থাকে। যথা: পায়ুপথের বহি:পাইলস, অন্ত:পাইলস, উভয় ধরণের পাইলস একসাথে হওয়া।

বহি:পাইলস: পায়ুপথের বাইরের দিকে যে পাইলস হয় তাকেই সাধারণত বহি:পাইলস বলে। এতে সাধারণ ব্যথা বোধ হতে পারে। বহি:পাইলসের সাধারণত কোনো পর্যায় থাকে না।

অন্ত:পাইলস: পায়ুপথের ভিতরের দিকে যে পাইলস হয় তাকে অন্ত:পাইলস বলে। অন্ত:পাইলসের বেশ কয়টি পর্যায় থাকে৷ অন্ত:পাইলসের সাধারণত ৪টি পর্যায় থাকে। যথা:

১. প্রথম পর্যায়: এ পর্যায়ে সাধারণত সবই স্বাভাবিক থাকে। এ পর্যায়ে অন্ত:পাইলস ফুলে বেরিয়ে আসে না।
২. দ্বিতীয় পর্যায়: এ পর্যায়ে এমনিতে পাইলস বেরিয়ে আসেনা কিন্তু পায়খানা করার পর পাইলস বেরিয়ে আসতে পারে যদিও তা নিজে নিজে স্ব স্থানে চলে যায়।
৩. তৃতীয় পর্যায়: তৃতীয় পর্যায়ে পাইলস ফুলে বেরিয়ে আসে এবং তা নিজে নিজে আহের স্থানে ফেরত যায় না। নিজের চাপ দিয়ে ফেরত পাঠাতে হবে।
৪. চতুর্থ পর্যায়: এটি সবচেয়ে মারাত্মক পর্যায়। চতুর্থ ও শেষ পর্যায় পাইলস বেরিয়ে আসে এবং তা নিজ স্থানে যায় না এমনকি আপনিও তা ঠিক করতে পারবেন না।

যত শুরুর দিকের পর্যায় রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হবে তত ভালো। যত সময় নষ্ট করবেন তত অবস্থা আরএ খারাপের দিকে চলে যেতে থাকবে।

উভয় পাইলস একসাথে: অনেকক্ষেত্রে আপনার ভিতরের ও বাইরের উভয় পাইলস এরই প্রদাহ হয়। উভয় পাইলসে অন্ত:পাইলস ও বহি:পাইলস একই সাথে ঘটতে থাকে। উভয় পাইলস একসাথে হলে কষ্ট আরও বেশি হয় কারণ আপনাকে দুই পাইলসেরই সমস্যা একসাথে ভোগ করতে হয়।

লক্ষণ: পাইলসের নানা ধরণের উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। প্রতিটি পাইলসেরই লক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
পায়ুপথের অন্ত বা ভিতরে যে পাইলস হয় তাতে তেমন কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। তেমন কোনো ধরণের ব্যথা থাকে না বা কোনো ধরণের অস্বস্তি বোধ হয় না।

কিন্তু কিছুক্ষেত্রে মলের সাথে রক্ত পড়তে পারে যদিও তা ব্যথাহীন হবে। অপরদিকে পায়ুপথের বাইরের দিকের যে পাইলস অর্থাৎ বহি:পাইলস হলে স্পষ্টভাবে কিছু উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। বহি:পাইলস হলে বসতেও অসুবিধা হয়, প্রায়ই চুলকানি বোধ হয়, পায়খানার সাথে রক্ত বের হয়, মল ত্যাগ করতে কষ্ট হয়, পায়ুর চারপাশে থোকা থোকা হয়ে ফুলে থাকে। উভয় ধরণের পাইলস একসাথে হলে আপনার উভয় পাইলস এরই লক্ষণ দেখা যাবে।

পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়?

পাইলস হলে নানা ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে। এতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। পাইলস হলে মল ত্যাগ করতে খুবই কষ্ট বোধ হয়। সাধারণ কোথাও বসতেও ব্যথা লাগে। মল ত্যাগের সাথে কমবেশি সবসময়ই রক্ত পড়তে থাকে। সবসময়ই অস্বস্তি বোধ হয়। খাদ্যাভ্যাসে বিপুল পরিবর্তন আনতে হয়।

অনেক অর্থ ব্যয় করে এর চিকিৎসা করতে হয়। আবার সঠিক সময়ে যদি চিকিৎসা না করাতে পারেন তাহলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি পাইলসের সঠিক চিকিৎসা করা না হলে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে যা পরবর্তীতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

পাইলস থেকে বাঁচার উপায় ও পাইলস হলে কি করবেন?

পাইলস থেকে বাঁচার উপায়:

পাইলস থেকে বাঁচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে সচেতনতা। আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে কি কি কারণে পাইলস হয় যা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করে নিয়েছে। পাইলস থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে অবশ্যই রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

আপনি সকল শাকসবজি ও প্রায় সব ফলমূলে রাফেজ পেয়ে যাবেন। রাফেজ আপনার খাদ্যনালী থেকে নানা বিষাক্ত পদার্থ শুষে নিয়ে আপনার খাদ্যনালী পরিষ্কার রাখে। এছাড়াও রাফেজ জাতীয় খাদ্য আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। নিয়মিত ব্যয়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন।

পায়ুপথের যৌ-ন-ক্রিয়া থেকে বিরত থাকুন৷ শুধু শুধু টয়লেটে গিয়ে বসে থাকবেন না। বেগ আসলেই কেবল টয়লেটে যান। এসকল নিয়ম মেনে চললে পাইলস থেকে বাঁচা সম্ভব। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে যদি পাইলস পরিবারের কারো থাকে তাহলে প্রায় নিশ্চিতভাবে আপনার পাইলস হবে কিন্তু তবুও সচেতনতা অবলম্বন করবেন।

পাইলস হলে করণীয় কি?

এখন একসময় আপনি বুঝতে পারলেন বা আপনার মনে হচ্ছে আপনার পাইলস হয়েছে। তো এখন কি করবেন? প্রথমত খাদ্যে রাফেজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। বেশি বেশি শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করুন।

এর পাশাপাশি আপনি ইসফগুলের ভূসি গ্রহণ করুন। এরপর ডাক্তারের সাথে গিয়ে যোগাযোগ করুন। ডাক্তার আপনার অবস্থা বুঝে আপনাকে কিছু ওষুধ ও মলম দিয়ে দিবে। এর পাশাপাশি আপনাকে একটি খাদ্য তালিকা ও ব্যায়ামও দিতে পারে। ডাক্তারের দেওয়া নিয়ম মানলে আপনি হয়তো এ থেকে সেরেও উঠতে পারেন।

কিন্তু একটি সমস্যা হয়কি যে অনেক সময়ই রোগী ডাক্তার দেখাতে চান না। ইতস্তত ও লজ্জাবোধ করে। এবং এভাবে অনেক দিন নষ্ট করে। যতদিন যাবে পাইলসের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকবে। তাই অবহেল ও লজ্জা না পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তার দেখানো উচিত।

মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি পেলে কি কি ওষুধ দেওয়া যায়?

মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগ করে তেমন কোনো লাভ নাই। মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি পেলে ওষুধ বা মলম প্রয়োগের তেমন কোনো দরকার নেই। কিন্তু ডাক্তার যদি বলে ও ঠিক মনে করে তাহলে মলম ব্যবহার করতে পারেন। আর ভুলেও কোনো ওষুধ বা মলম নিজে নিজে ব্যবহার করবেন না।

অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হলে ব্যথার ওষুধ বা মলম ব্যবহার করতে। কিছু ইঞ্জেকশনও আছে যা ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ডাক্তার যদি এসকল ওষুধের পরামর্শ না দেয় তাহলে তা নিজে বেশি বুঝে ভুলেও ব্যবহার করতে যাবেন না। পাইলস যদি অতিরিক্ত খারাপ অবস্থায় চলে যায় তবে ডাক্তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

মলদ্বারে মাংস বৃদ্ধি হোমিও ঔষধ কি কি ?

আপনারা অনেকেই জানতে চান মলদ্বারে মাংস বৃদ্ধি হোমিও ঔষধ কি কি খাওয়া যায়? আসলে মলদ্বারের মাংস বা পাইলস হলে হোমিওপ্যাথিক চিকৎসা না করানোই ভালো। মলদ্বারে মাংস বৃদ্ধি হোমিও ঔষধ না নিয়ে এর বদলে বিশেষজ্ঞ এলোপ্যাথিক ডাক্তার দেখানো ভালো হবে।

কিন্তু যদি আপনি একান্ত ভাবে হোমিও চিকিৎসা করাতেই চান তাহলে নিজ দায়িত্বে একজন রেজিস্টার্ড বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের কাছে যান। আপনার অবস্থা বিশ্লেষণ করে যে ওষুধ খেতে দিবে কেবল সেই ওষুধই গ্রহণ করবেন।

কোন ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত?

মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি পেলে আপনার এএলোপ্যাথিক উপায়ে চিকিৎসা করাতে হবে। পাইলস হলে যেহেতু সাধাণত অপারেশন করতে হয় সেহেতু সার্জারি বিশেষজ্ঞদের দেখাতে হবে। আপনি যেকোনো ভালো বৃহদান্ত ও পায়ুপথ সার্জারি বা ব্রেস্ট ও কোলোরেক্টাল সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখাতে পারেন।

এই ছিলো (মলদ্বারের মাংস বৃদ্ধি পেলে করণীয় কি? মলদ্বারে মাংস বৃদ্ধি হোমিও ঔষধ) আজকের মতো। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Widedetails এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

© 2024 Widedetails - All Rights Reserved