প্রবাসী লোন ১০ লক্ষ টাকা এখনি নিয়ে নিন

পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আসে বাংলাদেশী প্রবাসী ভাইয়েরা। তারা দিনরাত পরিশ্রম করে মা বাবা,ভাই বোন নিজের পরিবারকে হাসিখুশি রাখার জন্য। একটু বেশি ইনকাম করলে পরিবারের আর্থিক অবস্থা দূর হবে, দেশের রেমিটেন্স বাড়বে। নিজের জীবনের অনেক মূল্যবান সময় বিসর্জন দিয়ে প্রিয়জনের কাছ থেকে দূরে থাকে শুধুমাত্র নিজের পরিবার ভবিষ্যত গড়ে দেয়ার জন্য।

বেশিরভাগ মানুষ অর্থের অভাবে বিদেশে যেতে পারেনা। একজন নিম্নবিত্ত পরিবারের ৫/৬ লক্ষ টাকা জোগাড় করা অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আলোচনা করবো-

* কিভাবে খুব সহজে প্রবাসী লোন ১০ লক্ষ টাকা নিতে পারবেন?
* ব্যাংক সবোর্চ্চ কয় লক্ষ টাকা ঋন দেয়?
* লোন নেয়ার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে?
* লোনের শতকরা কয় পার্সেন্ট হারে সুদ আসবে?
* মাসে কত টাকা করে কিস্তি দিতে হবে?
* কোথায় গিয়ে এই লোনের আবেদন করবেন?

যেহেতু আমরা প্রবাসী লোন নিয়ে আলোচনা করবো তার আগে জানা দরকার –

প্রবাসী লোন কয় প্রকার?

প্রবাসী লোন ৪ প্রকার।

১. অভিবাসন ঋণ: আপনি ভিসা পাওয়ার পরে হয়তো বিদেশ যাবেন কিন্তু এই মুহূর্তে আপনার হয়তো টাকা নেই তখনি আপনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন। এটাকে অভিবাসন ঋন বলে।

২. পুনর্বাসন ঋণ: আপনি হয়তো বিদেশে গিয়েছেন সেখানে ভালো কিছু করতে পারেননি আবার দেশে ফিরে এসেছেন। এখন দেশে ব্যবসা বা কর্মসংস্থান গড়তে চান সেক্ষেত্রে ব্যাংক আপনাকে যে লোন দেয় সেটা হচ্ছে পুনর্বাসন ঋন।

৩. বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ: বিশেষ পুনর্বাসন ঋন হচ্ছে করোনা মহামারী অথবা অন্য কোন বিপদে পড়ে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন তাদের জন্য সরকার এ ঋণ দিয়ে থাকে।

৪. বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ।

আজকে আমার জানবো বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ নিয়ে। কারন এই ঋণের সুবিধা অনেক বেশি এবং এই লোনটা আপনি খুব সহজেই পেতে পারবেন। আপনার খুব একটা ঝামেলা করতে হবেনা।
২০২১ সালের জানুয়ারি ৩ তারিখে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এই ঋণের উপর বিশেষ সংশোধনী নীতিমালা জারি করে। পূর্বে এই লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্ত ঝামেলা ছিল নতুন নিয়মে অনেক কিছু সহজ করে দেয়া হয়েছে এবং প্রবাসীরা খুব সহজে এই লোনটি নিতে পারবেন।

কারা এই লোনটি আবেদন করতে পারবে?

* কোনো বাংলাদেশী নাগরিক বৈধভাবে চাকরির উদ্দেশ্যে বিদেশে থাকলে।

ধরুন আপনি ভিসা নিয়ে বিদেশে কর্মরত আছেন কিন্তু আপনি এই মুহূর্তে চাচ্ছেন যে আপনার পরিবারের ছেলে-মেয়ে, মা-বাবা, ভাই-বোন এদের মধ্যে কাউকে একজন ব্যবসা বা চাকরি দাঁড় করিয়ে দেবেন। আপনি বিদেশে যে ইনকাম করছেন সে টাকা দিয়ে পরিবার, সংসারে খরচ পৌঁছাতে পারছেন না। আপনার আরো সাপোর্ট দরকার পরিবারে সেক্ষেত্রে বিদেশে থাকা অবস্থায় আপনি এই লোনের আবেদন করতে পারবেন।

বিদেশ থেকে প্রত্যাগমন করলে।

আপনি যদি বিদেশ থেকে ছুটি নিয়ে দেশে বেড়াতে আসেন সে সময় আপনি এ লোনের আবেদন করতে পারবেন। পরিবারের যারা আপনার ইনকামের উপর নির্ভরশীল তারাই এ লোনের পাবে।
কয় লক্ষ টাকা লোন নিতে পারবেন?

১. জামানত ছাড়া

আপনি কোনো জামানত ছাড়া ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নিয়ে পারবেন। মানে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনো জামানত দিতে হবে না শুধুমাত্র ২ জন গ্যারান্টর লাগবে। সেই গ্যারান্টর পরিবারের কেউ হতে পারে, আত্নীয় কেউ হতে পারে। তবে গ্যারান্টরদের ইনকামের সোর্স থাকতে হবে।

২. জামানত দিয়ে

৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা: আপনার ৩ লক্ষ টাকায় কাজ হচ্ছেনা আরো বেশি টাকা প্রয়োজন আপনি জামানত দিয়ে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ২জন গ্যারান্টরের পাশাপাশি জমির দলিল জমা দিতে হবে। তার মানে আপনি যদি ৩ লক্ষ টাকা উপরে লোন নিতে চান আপনাকে জমির দলিল জামানত দিতে হবে।

৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা : প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে হলে আপনার জমি, সম্পত্তি ব্যাংকের নিকট রেজিস্ট্রি মর্টগেজ করে দিতে হবে। যদি বিশেষ প্রয়োজন না হয় এই শোন না নেওয়াই ভালো।

লোন নেয়ার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে?

১. পাসপোর্টের কপি: আপনি দেশে অথবা বিদেশে থাকেন প্রথমত এই লোনটি নিতে হলে পাসপোর্টের কপি লাগবে। সেই পাসপোর্টে অবশ্যই আপনি যে বিদেশে গিয়েছেন তার বর্হিগমন সীলযুক্ত পাতা অর্থাৎ পাসপোর্টে যে পাতার বর্হিগমন সীল মারা আসে সেই পাতাটির কপি লাগবে।

২. লোনের এপ্লিকেশন ফর্ম: এটা একটি কমন ইস্যু।

৩. ভিসা কার্ড কপি : আপনি কোন দেশে গিয়েছেন সেটার একটা ভিসা কপি লাগবে এবং আপনি যেখানে গিয়ে কাজ করছেন যেখানে যে আইবি কার্ড দেয়া হয়েছে সেটার কপি জমা দেয়া লাগবে।

৪. ৩ টি চেক বইয়ের পাতা: আপনার বেতন যে ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া হয় সেই ব্যাংকের আপনার একাউন্টের চেক বইয়ের ৩ কপি পাতা জমা দিতে হবে।

৫. গ্যারান্টরের বিস্তারিত কাগজপত্র ছবি : আপনি যাকে গ্যারান্টর হিসেবে দিতে চান তার ছবি, নাগরিক সনদপত্র, এনআইডি কার্ড, ইনকামের ডুকুমেন্ট ইত্যাদি।

৬. অন্যান্য কাগজপত্রের কপি

লোনের চার্জ, সুদের হার ও মেয়াদ

* আদেদন ফরমটি মূল্য ২০০ টাকা।
* কারেন্ট একাউন্ট করতে হবে ১০০০ টাকা।
* লোন প্রসেসিং ফি ১%।
* লোনের সুদের হার ৯%।
* লোনের মেয়াদ ১ থেকে ৫ বছর।
* ১ থেকে ১১ মাস পর্যন্ত প্রেস পিরিয়ড ।

কোন কোন খাতে এই ঋণ পাবেন ?

১. কৃষি খাত ( প্রানী সম্পদ, মৎস্য সম্পদ, হাঁস মুরগি পালন, গবাদিপশু পালন, মৌমাছি পালন)
২. কুটির শিল্প ( হস্তশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশশিল্প,কাঁঠশিল্প, বস্ত্রশিল্প, নকশিকাঁথা)
৩. বানিজ্যিক খাত ( মুদি দোকান, চায়ের দোকান, হোটেল, লাইব্রেরী, ইলেকট্রনিক, ফার্মেসি,মনিহারি, কম্পিউটার)

প্রবাসী লোন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের যে কোনো শাখায় গিয়ে কথা বলতে হবে। আপনার এলাকায় যে শাখাটি রয়েছে সেখানে যোগাযোগ করবেন। আজকে এ পর্যন্ত। সবাইকে ধন্যবাদ।

Related Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

© 2024 Widedetails - All Rights Reserved