প্রিয় প্রবাসী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিন। আজকে আমি শুধু আপনাদের জন্য প্রবাসী লোন সম্পর্কে আলোচনা করবো। বিদেশে বসবাসরত অনেক প্রবাসী জানতে চান দেশে আসলে আমি ব্যাংক থেকে লোন পাবো কিনা? কোন কোন ব্যাংক থেকে সহজে লোন পাওয়া যায়,কত টাকা পাবো ইত্যাদি। সেকারনে প্রবাসীদের স্পেশাল সুবিধা নিয়ে একটি লোন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবো সেটা হচ্ছে “প্রবাসী আবাসন ঝণ”।
হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন একমাত্র বাংলাদেশী প্রবাসীদের জন্য স্পেশাল ঋণের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করতে পারে সে চিন্তা মাথায় রেখে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য বিশাল পরিমাণ ঋণ সহায়তা দিচ্ছে হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন। তো চলুন এই লোনের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিভিন্ন ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য নানা লোন দিয়ে থাকে। একজন প্রবাসী হিসেবে যে কোনো জায়গায় লোনের আবেদন করতে পারেন সেক্ষেত্রে ছোটখাটো এমাউন্ট পেতে পারেন। কিন্তু হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন একজন প্রবাসীকে ২ কোটি পর্যন্ত লোন দিচ্ছে যা কনো ব্যাংক আপনাকে দেবে না।
প্রথমে আসি এই লোনটা কারা পাবে?
আপনি ইউরোপ,মধ্যপ্রাচ্য,আমেরিকা,কানাডা,ডেনমার্ক ইত্যাদি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশী এ লোন পাবেন। তিনটি ক্যাটাগরিতে আপনি এই ঋণ নিতে পারবেন।
১. বাড়ি নির্মাণের একক লোন
২. বাড়ি নির্মানের গ্রুপ ভিত্তিক লোন ( অর্থাৎ আপনার পরিবারের ৫জন সদস্য)
৩. বাড়ি নির্মানের যৌথ লোন (৩ জন প্রবাসী বন্ধু মিলে)
১. বাড়ি নির্মাণের একক লোন
বাড়ি নির্মাণের একক লোনের জন্য আপনি যদি ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এরিয়া ভিতরে লোন নেন তাহলে সেই লোনের সুদ ৯.০০% হারে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত নিতে পারবেন। এরপরে যদি ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনের বাহিরে অর্থাৎ মেট্রোপলিটন এলাকায় লোন নেন তাহলে ৮.০০% সুদের হারে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন। এবার আসি সিটি করপোরেশ এবং মেট্রোপলিটন এলাকা বাদে দেশের সকল জেলা পর্যায়ে এলাকায় আপনাকে ৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন দিচ্ছে হাউস বিল্ডিং করপোরেশন।
২. বাড়ি নির্মাণের গ্রুপভিত্তিক লোন
বাড়ি নির্মাণের জন্য গ্রুপভিত্তিক লোনটাও একক লোনের মত। তবে গ্রুপভিত্তিক লোন একটু কম। গ্রুপভিত্তিক লোন সিটি করপোরেশনের এরিয়া সবোর্চ্চ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দেয়া হয়। সুদের হার একি থাকবে। মেট্রোপলিটন এরিয়ায় ৮.০০% সুদের ৬০ লক্ষ টাকা এবং জেলা পর্যায়ে ৪০ লক্ষ টাকা লোন পাবেন।
৩. বাড়ি নির্মাণে যৌথ লোন
আপনি যদি মনে করেন একক লোন কিংবা গ্রুপভিত্তিক লোন আপনার কাছে এর পরিচালনায় দায়িত্ব কঠিন মনে হয় সেক্ষেত্রে আপনি যৌথ লোন নিতে পারেন। আপনারা বিশ্বস্ত ৩ জন প্রবাসী বন্ধু মিলে এই লোন নিয়ে কোনো ইন্ডাস্ট্রী গড়ে তুলতে পারবেন। যৌথ লোনটাও একক লোনের মত একটি রকমের। লোনের টাকার পরিমাণ ও সুদের হার সবকিছু একই।
প্রবাসী লোন আবেদনের যোগ্যতা-
১.লোন আবেদনের আপনার প্রথম কোয়ালিফিকেশন হচ্ছে জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে সাথে প্রবাসী হতে হবে। তার মানে আপনার যদি এনআইডি কার্ড থাকে এবং প্রবাসী হন তাহলে আপনি এ লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
২. আপনার নিজের নামে জমি থাকতে হবে। মানে যে জমিটার উপরে আপনি বিল্ডিং করতে চাচ্ছেন সেটার দলিল থাকতে হবে।
৩. আপনার বিদেশে কমপক্ষে ৩ বছর বৈধ প্রবাসী হয়ে বসবাস করতে হবে।
এরপরে আপনি বিদেশে থাকা অবস্থায় এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনার সকল বৈধ কাগজপত্র ভিসা,ওয়ার্ক পারমিট,এপয়েন্টমেন্ট লেটার,সেলারি স্টেটমেন্টে এগুলো জমা দিয়েই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু যখনি আপনি দেশে আসবেন দেশে আসার পরে নিকটস্থ ব্রাঞ্চ গিয়ে মূল কাগজপত্র জমা দিয়ে লোন আবেদন করতে পারবেন। তবে আপনার বাংলাদেশী যে কোনো ব্যাংকের একটি একাউন্ট থাকতে হবে। ওই একাউন্ট আপনার লোনের টাকা চলে আসবে।
আর বাংলাদেশে অবস্থানকালে এই যে ব্যাংকের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা কারার জন্য একজন যোগ্য নমিনী থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনি বিদেশে চলে গেলে লোনের সমস্ত দায়িত্ব সেই নমিনী উপর থাকবে।
এরপরে আপনার যে সম্পত্তিটা যে জমির উপর আপনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বহুতল বিল্ডিং করবেন সেই জমিটা হাউস বিল্ডিং করপোরেশনের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি লোনের টাকা পরিশোধ করতে না পারেন।
এই ছিল যোগ্যতা। এ সমস্ত যোগ্যতা থাকলে আপনি লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ সাল ঘোষিত করেছে সরকার। এই রুপকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিএইচবিএফসি ‘প্রবাসী আবাসন লোন’ নামে একটি বিশেষ লোনের প্রকল্প চালু করেছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন। এই লোনের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের কমেন্ট করে জানান।