আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার তাগিদে অর্থের দরকার পড়ে। বর্তমানে যে হারে দ্রব্যমূল্যে দাম বৃদ্ধি একজন নিম্ন আয়ের মানুষের সাংসারিক খরচ বহন করতে নিয়মিত হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর এ জন্যই অনেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনী মানুষের দৈনন্দিন জীবনের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে লোনের দরকার পড়ে। তাই সেসব নিম্ন আগের মানুষের জন্য আজকের এই পোস্টটি। আপনাদের সাময়িক আর্থিক সমস্যা মেটাতে লোন দিচ্ছে বাংলাদেশ বিকাশ। আজ আমি আপনাদের মাঝে বিকাশ লোন কি, কিভাবে পাবেন, কারা পাবেন, সুদ কত সবকিছু বিস্তারিত আলোচনা করব। এই পোষ্ট থেকে যা জানতে পারবেন।
➤ বিকাশ লোন কি ?
➤ বিকাশ লোন পাওয়ার যোগ্যতা
➤ বিকাশ লোন কারা পাবে ?
➤ বিকাশ লোন কিভাবে নেবেন ?
➤ বিকাশ লোন ফরম
➤ বিকাশ লোন নেওয়ার নিয়ম
➤ বিকাশ লোনের সুদ ও কিস্তি পরিমাণ
➤ বিকাশ লোন নেওয়ার শর্ত
➤ বিকাশ লোনের জন্য হেল্পলাইন নাম্বার
বিকাশ লোন কি ?
বিগত ২০২১ সালে সিটি ব্যাংক এবং বিকাশ যৌথভাবে লোন সেবা চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের এটিই প্রথম ডিজিটাল লোন পরিষেবা। এটি প্রথম ডিজিটাল লোন সিস্টেম যা আপনি মোবাইলের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। বর্তমানে হাজার হাজার গ্রাহক এ লোন ইতিমধ্যে পেয়ে গেছে। বর্তমানে বিকাশ এই লোনের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন পরিষেবা সার্ভিস চালু করেছে। বিকাশ গ্রাহকেরা দুটি পদ্ধতিতে টাকা লেনদেন করে থাকে ক্যাশ আউট পদ্ধতি এবং সেন্ড মানি পদ্ধতি। আজকে আমি এই পোস্টে কিভাবে বিকাশ লোন পাবেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বিকাশ লোন কারা পাবেন
অনেকেই জানতে চান, বিকাশ লোক কারা পাবে, সবাই কি এই লোনের আওতাভুক্ত ? আমরা সবাই জানি, ব্যাংক থেকে লোন পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় এবং অনেকটা সময় লেগে যায়। ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার জন্য আপনাকে সঠিক কাগজপত্র জমির দলিল এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট প্রমান হিসেবে দরকার হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করার ফল যদি মনে করে আপনি লোন পাওয়ার যোগ্য তারাই আপনাকে লোন দেবে।
কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল লোন অর্থাৎ বিকাশ লোনের ক্ষেত্রে সেরকম ঝামেলা নেই। তাই তাই ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে বিকাশ লোন পাবার জন্য অনেক গ্রাহক আগ্রহী। আপনি এই ডিজিটাল লোক পেতে বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে বিকাশ এপস ব্যবহার করে যখন তখন লোন নিতে পারবেন। বিকাশের সব গ্রাহক কিন্তু এই লোকের জন্য আওতাভুক্ত নয়। বেশিরভাগ গ্রাহক বিকাশের এই লোন নিতে পারবেন না।
প্রথমত যাদের পুরনো বিকাশ একাউন্ট রয়েছে অর্থাৎ শুধুমাত্র জাতীয় দিয়ে কেওয়াইসি (KYC) ফর্ম পূরণ করে বিকাশ একাউন্ট করেছেন তারা এই লোন পাবেন না। আবার যারা বায়ুমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে কেওয়াইসি পূরণ করেছেন এবং অতি অল্প সময়ের জন্য বিকাশ ব্যবহার করেছেন তারাও এই লোনের জন্য আওতাভুক্ত নয়। সিটি ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, যারা জাতীয় পরিচয় পত্র এবং বায়োমেট্রিক মাধ্যমে ই- কেওয়াইসি সম্পন্ন করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে বিকাশ অ্যাপস ব্যবহার করে মোটা অংকে এমাউন্ট লেনদেন করেছেন তারাই এই লোন পাবেন।
বিকাশ লোন পাওয়ার যোগ্যতা
যেহেতু এটি সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ভিত্তিক ডিজিটাল লেনদেন সেহেতু বিকাশ লোন পাওয়া জন্য তেমন একটা যোগ্যতার দরকার পড়ে না। আপনি লোনের জন্য আবেদন করার পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আপনাকে যাচাই-বাছাই করে বলে দেবে আপনি লোন পাওয়ার যোগ্য কিনা। বিকাশ লোন পাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, আপনি বিকাশ অ্যাপসে যত বেশি টাকা লেনদেন করবেন তত লোন পাওয়ার জন্য উপযুক্ত হবেন। এজন্য বিকাশ লোন পাওয়ার প্রথম দুটি যোগ্যতা হল-
১. জাতীয় পরিচয় পত্র সহ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ই- কেওআইসি সম্পন্ন করা বিকাশ একাউন্ট।
২. দীর্ঘদিন ধরে বিকাশ অ্যাপসে বেশি টাকা লেনদেন করা।
আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এথায় ছিল প্রধান ২ টি বিকাশ লোন পাওয়ার যোগ্যতা।
বিকাশ লোন নেওয়ার নিয়ম
এই লোনের আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনে করা যাবে। বিকাশ লোন পেতে হলে আপনাকে প্রথমে বিকাশ অ্যাপ লগইন করে নিতে হবে। সেখান থেকে loan আইকনে ক্লিক করুন। নিচের ছবিতে নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন।
ওখানে ক্লিক করার পর আপনি বিকাশ একাউন্ট খোলার সময় ই-কেওয়াইসি ফর্মে যেভাবে তথ্য দিয়েছেন সে তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করে সিটি ব্যাংকে দেয়ার পারমিশন দিতে হবে।
সিটি ব্যাংক বলছে তারা আপনাকে সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন দেবে। যদি রাজি থাকেন তাহলে সম্মতি দিয়ে এগিয়ে যান।
লোনের পরিমান ও কিস্তির মেয়াদ সিলেক্ট করুন। আমি এখানে ৩০০০ টাকা লোনের জন্য সিলেক্ট করলাম। তারপর এগিয়ে যান।
আপনি ব্যাংক থেকে কত টাকা লোন নিচ্ছেন এবং প্রতি মাসে কত টাকা পরিশোধ করতে হবে তা জেনে রাখুন এবং এগিয়ে যান।
লোনের নির্দেশনা ও নীতিমালা জেনে নিন তারপর সম্মতি দিয়ে এগিয়ে যান। এবার আপনার রোন কনফার্ম করে পিন কোড নাম্বার বসিয়ে দিন। বেশ,সাথে সাথে আপনার একাউন্টে টাকা যোগ হবে। আর যদি আপনি বিকাশ লোন পাওয়ার জন্য যোগ্য না হয় তাহলে শুরুতে আপনাকে জানিয়ে দেবে। নিছের ছবিটি দেখুন-
এখানে আপনাকে বলে দিচ্ছে,আপনি এখনো বিকাশ লোন পাওয়ার যোগ্য নন।
বিকাশ লোন কত টাকা পাওয়া যায় ?
বিকাশ আপনাকে আপাতত সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আপনাকে লোন দিচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে এই ডিজিটাল লোনের পরিমাণ আরো বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে
বিকাশ লোনের সুদ ও কিস্তি পরিমাণ
নিম্নে বিকাশ লোনের সুদ ও কিস্তির পরিমাণ দেওয়া হল-
বিকাশ লোন পরিষদের নিয়ম
বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো ব্যাংকে লোধের সুদের হল শতকরা 9%। সিটি ব্যাংকের বিকাশ লোনের ক্ষেত্রেও সুদের হার ৯ পার্সেন্ট।
লোন নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে, সুদসহ সমানভাবে তিন কিস্তিতে থাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রত্যেক মাসে নির্দিষ্ট থাকার পরিমাণ আপনার বিকাশ একাউন্ট থেকে খেতে নেয়া হবে। অবশ্যই তার আগে বিকাশ থেকে এসএমএস এর মাধ্যমে থাকা সংক্রান্ত নোটিফিকেশন দেয়া হবে।
মনে রাখবেন, ওই নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আপনাকে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে। আপনি সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করছেন কিনা তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণ করবে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে থাকা পরিশোধ না করেন তাহলে আপনাকে ঋণ খেলাপি হিসেবে ধরা হবে এবং পরবর্তী লোন নেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে।
বিকাশ লোন নেওয়ার শর্ত
বিকাশ লোন পাওয়ার জন্য তেমন কনো শর্ত প্রযোজ্য নয়। বিকাশ এবং সিটি ব্যাংকের যৌথ নির্দেশনা অনুসরন করলে আপনি অতি সহজে ২০০০০ টাক লোন নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে লোনের জন্য কনো জামানত দিতে হবে না এবং কনো নিয়মকানুন অনুসরন করতে হবে না।
তারা যদি আপনাকে যোগ্য গ্রাহক মনে করে বিনা শর্তে লোন প্রদান করবে। তবে আপনি তাদের যতই যোগ্য গ্রাহক হন না কেন তারা আপনাকে ২০০০০ টাকার উপরে লোন প্রদান করবেনা। আশার কথা হচ্ছে,লোনের কিস্তি ও পরিশোধের উপর নির্ভর করে পরবর্তীতে লোনের পরিমান আরো বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।
বিকাশ লোনের জন্য হেল্পলাইন নাম্বার
বিকাশ লোনের জন্য ১৬২৪৭ অথবা ০২-৫৫৬৬৩০০১ এই নাম্বারে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন।
ইমেইল করতে পারেন[email protected]